আটলান্টিক সিটি থেকে সুব্রত চৌধুরী: সনাতন হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কয়েক দিনব্যাপী এই পূজায় পালিত হয় নানা রকমের অনুষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হলো “সিঁদুর খেলা”। এই সিঁদুর খেলার দেখা মেলে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিনে। এই দিনে কেবল দুর্গা মাকে বিদায়ই জানানো হয় না, এর সঙ্গে থাকে নানা আয়োজনও। সিঁদুর খেলা এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ।
ঐদিন সকালে পূজার পর থেকে শুরু করে দেবীকে বিদায়ের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে এই সিঁদুর খেলা। সিঁদুর খেলা হিন্দুদের রঙ খেলা থেকে কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন অর্থাৎ দশমীর দিনে সর্বশেষ যে রীতিটি পালিত হয়, এর নাম “দেবী বরণ”। বিবাহিত নারীরা সিঁদুরসহ অন্যান্য উপাচার সহকারে এই ‘দেবী বরণ’ করে থাকেন। দুর্গা মাকে বিসর্জনের জন্য বিদায় দেওয়ার আগে তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর অবশিষ্ট সিঁদুর দিয়ে তাঁরা একে অপরকে রাঙিয়ে দেন। মূলত এটিকে দেখা হয় সোহাগের কিংবা বিবাহিত নারীদের সৌভাগ্য কামনাস্বরূপ হিসেবে। এটি মূলত খেলেন বিবাহিত নারীরা। তাঁরা একে অন্যকে লাল রঙের সিঁদুরে রাঙিয়ে দেন। মাথার এক প্রান্ত থেকে শুরু করে পুরো সিঁথি জুড়ে থাকে এই সিঁদুর। এই লাল রংকে ধরা হয় শক্তির প্রতিরূপ হিসেবে।
এই সিঁদুর খেলার অন্যতম গুরুত্ব হলো, বিবাহিত নারীরা তাঁদের সিঁদুরের স্থায়িত্ব অর্থাৎ তাঁদের স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনার উদ্দেশ্যেই তাঁরা এই সিঁদুর খেলা খেলে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে তাঁরা একে অন্যের সিঁথি, হাতের শাঁখা ও মুখাবয়ব সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেন। বিবাহিত নারীরা একে অন্যের সৌভাগ্য কামনা করে এই সিঁদুর পরিয়ে থাকে। এই সিঁদুর খেলার মাধ্যমে বিজয়ার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কিছুটা আনন্দের সঞ্চার হয়। বিবাহিত নারীরা ব্যতীত এটি অবিবাহিত মেয়েরাও খেলে থাকেন। অবিবাহিত নারীদের বিবাহিত নারীরা এ জন্যই সিঁদুর পরিয়ে দেন, যাতে দুর্গা মায়ের আশীর্বাদে তাদের ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবন সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। এই দিনে প্রায় সব নারীই লাল রংয়ের শাড়ি পরে থাকেন।
গত ২৪ অক্টোবর মংগলবার দুর্গোৎসবের শেষ দিন সিঁদুর খেলায় মেতেছিল নিউ জার্সি রাজ্যের আটলান্টিক সিটির প্রবাসী হিন্দু নারীরা। দেবী দুর্গার বিদায়ের আগে মংগলবার সকালে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা। সকালে পূজা অর্চনার পর দেয়া হয় পুষ্পাঞ্জলি। এরপরই হিন্দু বিবাহিত নারীরা দেবীর পায়ে লাল টকটকে সিঁদুর নিবেদন করেন। পরে সেই সিঁদুর একে অপরকে লাগিয়ে আগামী দিনের জন্য শুভ কামনা করেন। সেই সঙ্গে স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন।