এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন, ওয়াশিংটন ডিসি - মহান ভাষা আন্দোলনের সকল শহিদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদায় “মহান শহিদ দিবস” এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে।
এই ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণে দূতাবাস বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গকারী সকল ভাষা বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে দিনব্যাপী এক কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, মার্কিন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মোহাম্মদ ইমরান এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব স্কট উরবম (Mr. Scott Urbom)।
রাষ্ট্রদূত ইমরান তার বক্তব্যে মহান ভাষা আন্দোলনের সকল শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বাঙালি জাতির ‘বাতিঘর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ভাষা সৈনিকদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার উপযুক্ত কূটনৈতিক মাধ্যম হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি নতুন প্রজন্মকে সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও জানার জন্য উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি স্কট উরবম বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, গত ৫০ বছরে তারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য খাতে বাংলাদেশে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ করেছে। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫০ বছর এবং এরপরেও বাংলাদেশের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করতে আগ্রহী।
স্কট উরবম বলেন মাতৃভাষা দিবস শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগনের হৃদয়েই নয়, সমগ্র পৃথিবীর মানুষের হৃদয়েও বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তিনি শ্রদ্ধার সাথে সেইসব বীরদের মহান আত্মত্যাগের কথাও উল্লেখ করেন যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও বাংলা ভাষা রক্ষায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
মার্কিন ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন আজ বাংলা পৃথিবীতে অন্যতম সর্বাধিক উচ্চারিত ভাষা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এবং এটি সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার প্রভাব ও গুরুত্বের প্রমাণ বহন করে ।
পরে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে দূতাবাস পরিবার, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ভারত, নেপাল, জাপান ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীরা এবং একটি বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক দল কবিতা আবৃত্তি, সঙ্গীত ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে উপস্থিত অতিথিদের মুগ্ধ করেন। পরে রাষ্ট্রদূত ইমরান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দূতাবাস আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এই গৌরবোজ্জ্বল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ও ডিফেন্স অ্যাটাচে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শাহেদুল ইসলাম অংশ নেন।
রাত ১২ টা ০১ মিনিটে দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের নেতৃত্বে দূতাবাস প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ‘প্রভাত ফেরি’ বের করার মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল দূতাবাস প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রদূত কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ প্রতিকৃর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পন, ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন, তথ্যচিত্র প্রর্দশন এবং বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন।
এ উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন মিনিস্টার (ইকনোমিক) ড. মোঃ ফজলে রাব্বি, মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) মোঃ রাশেদুজ্জামান এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি অহিদুজ্জামান নূর।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি, ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট এবং ভিসা উইং) মুহাম্মদ আব্দুল হাই মিলটন এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি মোঃ আতাউর রহমান।