নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটস্থ ডাইভারসিটি প্লাজায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বিষয়ে হাই কোর্টের রায় এবং ধর্মের নামে মিথ্যা কটুক্তির অজুহাতে কারাদন্ডে দন্ডিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী তিথি সরকারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গত ২১ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন এর আয়োজন করে ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক। সভায় ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক এর ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ইসকনের ব্রহ্মচারী শ্রীমান নিত্যানন্দ কিশোর দাস শ্রীমদ্ভগবদ গীতার শ্লোক পাঠের মধ্যে দিয়ে সমাবেশের শুভ সুচনা করেন। মহাসমাবেশ ও মানব বন্ধনের সভাপতিত্ব করেন ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক এর সভাপতি ভজন সরকার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রামদাস ঘরামী।
ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক এর বোর্ড অব ডাইরেক্টরের চেয়ারম্যান ডাঃ প্রভাত দাসের জোরালো বক্তব্যের মাধ্যমে সুচনা হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমাতা সুলভ আচরণ ও ফেইসবুক হ্যাক হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিথি সরকারের ধর্ম নিয়ে মিথ্যা মন্তব্যের উপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার ও হাইকোর্টের রায়ে ৫ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অশিক্ষিত মুর্খ হুজুরদের ওয়াজ মাহফিলে হিন্দুদের নিয়ে জঘন্যতম মন্তব্য, মুর্তি ও মন্দির ভাঙ্গা আহŸান এবং হিন্দুদের দেব-দেবী নিয়ে কটুক্তির কোন বিচার সাইভার সিকুরিটি এ্যাক্ট এর আওতায় না আসার কথা। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন, ৪৬০টি উপজেলায় হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ৫৬০টিরও অধিক মডেল মসজিদ তৈরি করেছেন কিন্তু ২ কোটি হিন্দুদের জন্য একটি মডেল মন্দিরও কি তৈরি করতে পারতেন না? অতঃপর মঞ্চে আসেন ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক এর উপদেষ্ঠা মন্ডিলীর প্রধান অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ১৯৭২ সালে রচিত হয় একটি ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান। পরবর্তিতে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তার মধ্যে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” যুক্ত করেছেন। অথচ এরশাদকে স্বৈরাচারী বলে সবাই গালাগালি করে কিন্তু এই কালো দাগ কেউ মোচন করার প্রয়াশ করেননি। সংখ্যালঘুদের চিন্তা বি.এন.পি, আওয়ামীলীগ কেউ করেননি। আমরা তাদের বিরোদ্ধাচারণ করি এবং ৭২’ এর সংবিধান ফিরে গিয়ে দেশের সংবিধানকে কালিমা মুক্ত করার আবেদন জানান। পরবর্তীতে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক এর কার্যকরী কমিটির সম্মানিত সভাপতি শ্রী ভজন সরকার। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, আমি সম্প্রতি বাংলাদেশে দেখে এলাম, ওয়াজ মহফিলে হিন্দুদেরকে মোল্লারা কিভাবে গালিগালাজ করে এবং দেব-দেবী নিয়ে নোংড়া কটুক্তি করে থাকে। অথচ সাইভার সিকুরিটির কোন প্রকার এ্যকসান আমরা দেখি না। তিনি তার মন্তব্যে এটির তীব্র নিন্দাজ্ঞাপন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে দাবী রাখেন যে, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সবাইকে এক চোখে দেখার জন্য এবং ৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে। অতপর বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক এর বোর্ড অব ডাইরেক্টরের সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান শ্রী সুশীল সিন্হা। তিনি তার বক্তব্যে এরশাদ সরকারের আমলে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে ৮ম সংশোধনির মাধ্যমে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” করার তীব্র নিন্দা জানান। সম্প্রতিকালে একজন বিচারপতি উল্লেখ করেন “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়”। তার এহেন মন্তব্য কোন ভাবে মানা যায় না এবং শ্রী সুশীল সিনহা তার জোড়ালে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন রাষ্ট্র চারটি মুলনীতির উপর নির্ভরশীল - গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ। যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয় তাহলে রাষ্ট্রে মুলনীতির লঙ্গন হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ ইন্ক এর উপদেষ্ট কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড: দ্বীজেন ভট্টাচার্য্য। তিনি সাইভার সিকুরিটি এ্যাক বিগত দিনের অসংগতির কথা গুলি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন ভারত যদি হিন্দু রাষ্ট্র, আমেরিকা যদি খৃষ্টান রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষিত হয় তাহলে মুসলিম ভাইদের অবশ্যই পছন্দ হতো না। তাই তিনি বাংলাদেশ পুনরায় ৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে বলেন এবং মেধাবী ছাত্রী তিথি সরকারকে কারামুক্তি করার দাবী জানান। অতপর বক্তব্য রাখেন প্রথিত যশা সাংবাদিক শিতাংশু গুহ বক্তৃতা রাখেন তিনি তার বক্তব্যে বলেন, জিয়াউর রহমানকে কেউ পছন্দ না করলেও ৫ম সংশোধনীতে তার দেয়া “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম” সব মুমিন মুসলিমগন পছন্দ করেন। স্বৈরাচারী সরকার এরশাদের ৮ম সংশোধনীতে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” সবাই পছন্দ করেন।
শেষে একে একে বক্তব্য রাখেন, শ্রী ভবতোষ মিত্র, সনজিত ঘোষ, এডভোকেট জয়জিত আচার্য্য, আশীষ ভৌমিক, দীনেশ মজুমদার, কার্তিক চন্দ্র দেব নাথ, নিতাই চন্দ্র পাল, সবিতা দাস, শংকর বিশ্বাস, পিন্টু দাস, স্বপন দত্ত, অসীম চন্দ্র দাস সহ প্রমুখ। তারা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশে নির্যাতিত, নিপিড়ীত হিন্দু সমাজের অবস্থা কথা বর্ণনা করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি