দর্পন কবির : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী স্টেট ডিপার্টম্যান্টের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে বৃহস্পতিবার রাতে প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। নিউইয়র্ক শহরের ফ্রেশমেডো এলাকার একটি রেষ্টুরেন্টে নারায়ণগঞ্জবাসীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে খোশ-গল্পে মেতে উঠেন মেয়র আইভী। নিজ শহর বিষয়ক আড্ডায় নানা প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি। মেয়র আইভী প্রথমবারের মত নিউইয়র্ক এসেছেন বলে প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসী তাঁকে সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজী হননি। কেন সংবর্ধনা নেবেন না-এই প্রশ্নের জবাবে মেয়র আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ শহর এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে দাতব্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আপনারা যে অর্থ খরচ করে আমাকে সংবর্ধনা দেবেন, ঐ অর্থ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দিয়ে দিন। এতে দুঃস্থ ও গরীব মানুষ উপকৃত হবে। তিনি আরো বলেন, সানফ্রান্সিসকো শহরে বসবাসকারী নারায়ণগঞ্জবাসীদের আর্থিক সহযোগিতায় শহরের একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে কিডনী ডায়ালিসিস করাতে পারছেন। নিউইয়র্ক প্রবাসীরাও এমন উদ্যোগ নিতে পারেন। জনকল্যাণমূলক যে কোন কাজে আপনারা আর্থিক সহযোগিতা করলে আমি মেয়র হিসাবে পাশে থাকব। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অসহায়, নিপীড়িত, দরিদ্র মানুষ এতে সেবা পাবে। তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সকল প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।
নারায়ণেগঞ্জ শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা এবং রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা থাকলে ফুটপাত দখল মুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু আমি অতীতে এ কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও নিয়েছি। মেয়র বলেন, আমি ফুটপাত দখল মুক্ত করতে ৪ শত হকারকে পুর্নাবাসন করেছিলাম। ফুটপাত ফের দখল হয়ে যায়। এভাবে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁদাবাজী হচ্ছে ফুটপাত দখল করে রাখার মূল উদ্দেশ্য। শহরের বিভিন্ন ফুটপাত থেকে কে বা কারা চাঁদা তুলছে, তা নগরবাসী জানে।
মেয়র আইভী বন্দর এলাকায় অচিরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পরিসর বড় এবং সেবা বাড়ানো হবে বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান। তিনি আরো বলেন, আমি ২০০৩ সালে যখন পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হই, তখন এই পৌরসভার অর্থভান্ডার ছিল শূণ্য। এ অবস্থা থেকে আমি দিনের পর দিন উত্তরণ ঘটিয়েছি। পৌর চেয়ারম্যান থেকে মেয়র হয়েছি, অনেক নগরবাসীকে আয়কর প্রদানে বাধ্য করেছি। পৌরসভার জমি বা রাস্তাঘাট দখলমুক্ত করেছি। পরিত্যাক্ত জিমখানা খাল এখন নয়নাভিরাম লেকে পরিণত হয়েছে। সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি এবং বিদেশী দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেয়ে আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজ করতে পেরেছি এবং এই কাজ ধারাবাহিকভাবে চলছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার লাল ফিতায় বন্দি হয়ে আছে ফতুল্লা থানাধীন কাশীপুর এবং এনায়েত নগর ইউনিয়নের কিছু এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনার বিষয়টি। এর পেছনে রাজনীতির কুটিল চাল রয়েছে। তবে আমার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে মেয়র আইভী’র সঙ্গে প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসীর আড্ডার আয়োজন করেছিলেন তাঁর ক্লাসমেট গ্রুপ-হাউকাউ এর সদস্যরা। তারা হলেন মাহফুজা মিতা, মোহাম্মদ পারভেজ, আছির আহমেদ মানিক, রওনক জাহান দিবা, ফারহানা চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, ক্রিস্টোফার গোমেজ, আলী আকবর বাবু ও মোস্তফা জামাল টিটু।
মেয়র আইভী’র সঙ্গে আড্ডায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম আজিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মতিউর রহমান, নির্মল পাল, কামরুল হাসান বাদল, চঞ্চল আহমেদ, মনিরুজ্জামান সেলিম, নূর হোসেন বাবুল, আসাদৌল্লা চৌধুরী বাদল, সাদেকুর রহমান লিখন, মনজুরুল করিম, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সম্রাট হোসেন এমিলি, শফিউদ্দিন প্রধান শফি, আব্দুল আউয়াল, মশিউর রহমান তুহিন, কামাল হোসেন টিটো, সুহিন আলী, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার জানে আলম বাবু, নিতাই দাস, অনিতা মোদক, লেখক ও সাংবাদিক দর্পণ কবীর, আয়েশা আক্তার লিলি, মহসিনা খান শিল্পী, সেলিম আহমেদ প্রমুখ।