নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব। শনিবার নিউইয়র্কের জ্যামাইকার ম্যারি লুইস একাডেমিতে এই উৎসবের আয়োজন করে লালন পরিষদ ইউএসএ। বেলা ২টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।
এবারের উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, কানাডা ও আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে প্রায় ২০০ শিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নেন।
মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন কিংবদন্তি শিল্পী নীনা হামিদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, ড. সিদ্দিকুর রহমান. কমরেড জাকির হোসেন, মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা নুরল আমিন বাবু, লালন উৎসবের আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ, গোপাল সান্যাল, স্বীকৃতি বড়ুয়া, মিডিয়া সমন্বয়ক পিনাকী তালুকদারসহ আয়োজকরা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রবীণ শিল্পী নীনা হামিদ বলেন, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির এই নান্দনিক বিকাশ দেখে ভীষণ ভালো লাগছে। আয়োজকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, 'নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি করে আমাদের বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। এবারের উৎসবমুখর ও নান্দনিক এই অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।'
উৎসবে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে যান লোকগানের শিল্পী লায়লা। অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, শাহ মাহবুব, আলভিন, মাইশা জেরিন এবং চিত্রনায়িকা ও নৃত্যশিল্পী মন্দিরা চক্রবর্তীর পরিবেশনা আমন্ত্রিত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মহিতোষ তালুকদার তাপস ও তার দলের বিশেষ পরিবেশনা। নিউজার্সির চন্দ্রা ব্যানার্জির তত্ত্বাবধানে দলীয় নৃত্য পরিবেশনা উৎসবটিকে এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাদিয়া খন্দকার, স্বাধীন মজুমদার ও সেঁজুতি তালুকদার।
উৎসবের আসা অতিথি বলেন, লালন কোনো জাতিভেদ মানতেন না। তাই তিনি গেয়েছেন, 'সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/লালন কয় জাতির কি রূপ দেখলাম না এ নজরে'। এরূপ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিমুক্ত এক সর্বজনীন ভাবরসে সিক্ত বলে লালনের গান বাংলার হিন্দু-মুসলিম সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। লালনের গান একসময় এতই জনপ্রিয় ছিল যে তা সাধারণ মানুষ ও নৌকার মাঝিমাল্লাদের মুখে মুখে শোনা যেত। এমনকি বর্তমানেও সকল মহলে এ গানের কদর বাড়ছে।
তারা আরও বলেন, লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি। যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামে পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবেও বিবেচনা করা হয় এবং তার গান উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।