নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : 'যত বই তত প্রাণ’ শ্লোগান নিয়ে চারদিনব্যাপী নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা ২৪ মে থেকে শুক্রবার শুরু হয়েছে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে আয়োজিত এই মেলা চলবে আগামী ২৭ মে সোমবার পর্যন্ত। এবারের মেলা ৩৩তম মেলা। দেশ-বিদেশের ৪০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০ হাজার নতুন বই নিয়ে এবারে মেলায় অংশ নিচ্ছে। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এই বই মেলার আয়োজক। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, অভিনেত্রী সারা যাকের, কথা সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অভিনেতা আফজাল হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী, নাজমুন নাহার পিয়ারী, অধ্যাপক আ ম স আরেফিন ছাড়াও দেশ ও প্রবাসের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্মিলিতভাবে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মর্যাদাশীল ভাষায় পরিনত করতে হবে। আমেরিকায় বড় হওয়া নতুন প্রজন্ম বইমেলা কে এগিয়ে নিয়ে যাবে আগামীতে এই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন বক্তারা। এরপর মিলনায়তনের ভেতরে ৩৩টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। অতিথি গণ একে একে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। অতিথিদেরকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেওয়া হয় এই সময়।
ঢাকা ও পশ্চিম বাংলার বাইরে বাংলা বই, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বৃহত্তম এই বইমেলায় উত্তর আমেরিকা তথা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখক ও সাহিত্যামোদীরা অংশ নেবেন। আমন্ত্রিত লেখক, অতিথি ও প্রকাশকদের অধিকাংশই ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক এসে পৌঁছেছেন। বাংলা একাডেমির মতো ভবনের সম্মুখস্থ সুবিশাল চত্বরে নির্মিত হয়েছে বই বিক্রয়ের জন্য সব স্টল। সঙ্গে থাকছে একটি শিশু মঞ্চ ও লেখককুঞ্জ।
এর আগে উদ্বোধনী দিনে মূল অনুষ্ঠানের আগে উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্টে নিউইয়র্কের খ্যাতনামা শিল্পী তাজুল ইমামের পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় সন্ধ্যায় গানের এই আসরে অংশ নিউইয়র্কের একাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়। উদ্বোধনী পর্বে সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতন, সংগীত পরিষদ, আড্ডা এবং উদীচীর শিল্পীরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেখক-সাংবাদিক শামিম আল আমিন।
এ বছরের বইমেলার একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সৌজন্য ‘জেনোসাইড ’৭১’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন। জেনোসাইড এখনো কেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি- সে বিষয়ে সেমিনারও থাকছে অনুষ্ঠানসূচিতে। মেলায় প্রতিবারের মতো এবারো থাকবে সেমিনার, কবিতা পাঠ, বই পরিচিতি, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকা ও কলকাতার পর, বাংলা বইয়ের সবচেয়ে বড় এই মেলায় এবার বিশ্বের অন্তত ১০টি দেশ থেকে লেখক পাঠক এবং প্রকাশক অংশ নেবেন। এ মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখকদের সদ্য প্রকাশিত ১০ হাজার বই নিয়ে ৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা মেলার তৃতীয় দিন, অর্থাৎ রোববার একক সংগীত পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠানের শেষদিন, অর্থাৎ সোমবার থাকবে দিনব্যাপী শিশু-কিশোর-যুবা উৎসব, তারুণ্যের উল্লাস।
উল্লেখ্য, বিগত মেলার মতো এবারের ৩৩তম মেলাতেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ‘জিএফবি/মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এই পুরস্কারের মূল্যমান ৩,০০০ ইউএস ডলার। ইতিপূর্বে যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নির্মলেন্দু গুণ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, দিলারা হাশেম, শামসুজ্জামান খান ও আসাদ চৌধুরী। এছাড়াও মেলায় অংশগ্রহণকারী সেরা প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশক পুরস্কার' প্রদান করা হবে। এই পুরস্কারের মূল্যমান হবে ৫০০ ইউএস ডলার। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য মেলার পক্ষ থেকে দেয়া হবে জিএফবি-মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া প্রবাসী লেখকদের জন্য দেয়া হবে শহীদ কাদরী স্মৃতি পুরস্কার।