নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে বাংলাদেশ বিষয়ক সম্মেলন : আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে-এমন আলোচনা অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে হয়নি, এটি সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত মতামত-পররাষ্ট্র উপদেষ্টা: (ভিডিও সহ)
নিউজ২৪ইউএসএ.কম, নিউইয়র্ক : বাংলাদেশে আগামী ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে-এমন আলোচনা অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে হয়নি। এটি একান্তই সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত মতামত বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন। নিউইয়র্কে ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সম্মেলনে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতিমালার কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কঠোর নিজস্বতা থাকবে।
সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত এই সম্মেলনে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সব দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করে যাবে। দেশ আজ নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আমাদের বৈদেশিক নীতির কিছু ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে কারো কোনো পরামর্শে বিচ্যূত হবো না। আমরা আমাদের নিজস্বতা ও মর্যাদা বজায় রেখে প্রতিবেশীসহ সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন। তাদের প্রেরিত অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ অবদান রেখে চলেছে। আমাদের ছাত্র-জনতার আকাঙ্খা পূরণে ও দেশের স্বার্থ রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।
সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপার্সন এম এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জাতিসংঘ স্কলার ও চিন্তাবিদ ইন্দনেশিয়ার ড. শামসী আলী, জাতিসংঘের পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ইনা ইসলাম, লন্ডন ব্রান্ট কাউন্সিলের প্রাক্তন মেয়র পারভেজ আহমদ ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতা মোঃ সবুর খান।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এনআরবি সেন্টার আমেরিকার সাপোর্ট গ্রুপের প্রতিনিধি ব্যবসায়ী সানওয়ার চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক শামসাদ হুসাম, সমাজসেবী বদরুন নাহার মিতা ও কবির চৌধুরী, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর বদরুল আলম, মহিলা উদ্যোক্তা তহুরা চৌধুরী, এডভোকেট নাসির উদ্দীন, কমিউনিটি নেতা রোকন হাকিম, ব্যবসায়ী নেতা লিটন আহমদ, ব্যাংকার ওয়াসেফ চৌধুরী, সমাজসেবী আব্দুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মোজাফ্ফর আহমদ, তরুণ উদ্যোক্তা শেখ ফরহাদ প্রমুখ। আলহাজ আব্দুর রহিমের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
বক্তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রবাসী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পাশাপাশি দল নিরপেক্ষ মেধাবী ব্যক্তিদেরও কাজে লাগাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য ইতিবাচক কার্যক্রম এবং সৎ ও নীতিবান কর্মকর্তাদের প্রশাসনের কাজে নিয়োজিত করার পথ তৈরীর আহবান জানিয়ে বলেন, প্রবাসীরা দিতে চান, রাষ্ট্রের কাজ হবে এটি গ্রহনের ব্যবস্থা নেওয়া।
বক্তারা বলেন, দেশে দুর্নীতি ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, লুটের টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। লুটেরাদের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে, রাজনীতির নামে দেশের জনগণের এবং প্রবাসীদের হয়রানী ও সম্পদ হরণ বন্ধ করতে হবে, আদর্শ রাজনীতিবিদদের অগ্রাধিকার দিয়ে দেশ পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, প্রবাসীরা বিদেশে দেশের ব্র্যান্ডিং করছেন, রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছেন। সুতরাং রাষ্ট্রকে প্রবাসীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট নবায়নসহ অত্যাবশ্যকীয় কনসুলার সেবাগুলো সহজলভ্য করতে হবে। সেকিল চৌধুরী বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন, তাদের ত্যাগ বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এ কাজকে আরও এগিয়ে নিতে যেতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে দলবাজির বাইরে রাখতে হবে, কূটনৈতিকদের দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে হবে। মিশনগুলোতে দলমত নির্বিশেষে সকল প্রবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। মিশন কর্মকর্তাদের অযথা কাজে যোগদান থেকে বিরত রাখতে হবে। সেকিল চৌধুরী বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও প্রকাশনার কাজ থেকে মিশন কর্মকর্তাদের বিরত থেকে প্রবাসী ও দেশের কাজে সময় ব্যয় করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।