নিউইয়র্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নাগরিক সংবর্ধনা দিতে চায় বাংলাদেশ সোসাইটি
নিউজ২৪ইউএসএ.কম, ডেস্ক, নিউইয়র্ক : জাতিসংঘের এবারের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্ক আসছেন বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরকালীন সময়ে তিনি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্ক অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। তাঁর নিউইয়র্ক সফরকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মাদার সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউইয়র্ক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ড. ইউনূসকে নাগরিক সংবর্ধনা দিতে চায়। সোসাইটির দাবী ড. ইউনূস একজন বিশ্ব বরণ্যে সম্মানীত এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তি। তাই প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধিত করার দাবীদার বাংলাদেশ সোসাইটি। এজন্য সোসাইটির সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলেও সংগঠনের কর্মকর্তারা দাবী করেছেন। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিটির এলমহার্মস্টস্থ সোসাইটির নিজস্ব অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। খবর ইউএনএ’র।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী। এরপর সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়া লিখিত বক্তব্যে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসময় সোসাইটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার সহ সোসাইটির অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে সহ সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন এবং প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকার প্রধান যোগ দেন। অন্যান্য বছরগুলোতে রাজনৈতিক সরকার থাকায় সরকার প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সংশ্লিষ্ট দলের মাধ্যমেই তাদের সফর সংμান্ত সব আয়োজন করা হয়। এমনকি সংবর্ধনার আয়োজনও করা হয় দলীয়ভাবে। এতে বিপুল সংখ্যক সাধারণ প্রবাসী তাদের দাবি-দাওয়া ও মনের কথা সরকার প্রধানের সামনে বলার সুযোগ কখনোই পান না। রাজনৈতিক দলের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ব্যাস্ত থাকায় প্রবাসীদের সাধারণ সমস্যা ও সম্ভাবনার কথাগুলো সরকার প্রধান জানতেই পারেন না, ফলে সেগুলোর সমাধানও বছরের পর বছর হয়নি।
আব্দুর রব মিয়া বলেন, বর্তমানে পরিবর্তিত একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার ছাত্র-জনতার দাবি অনুযায়ী- রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। সেই সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, বিশ^ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২২-২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তাঁর এই সফর অন্যান্য সরকার প্রধানের সফরের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। আমরা আশা করছি- নিরপেক্ষ, নির্দলীয় এই সরকারের প্রধানের কাছে সকল প্রবাসী বাংলাদেশী তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত মনের কথাগুলো সহজে বলার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ সোসাইটিও সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে সেই সুযোগটি গ্রহণ করতে চায়।
রব মিয়া বলেন, আমরা সকল প্রবাসীদের আমব্রেলা সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে এবারের নাগরিক গণ-সংবর্ধনার আয়োজন করতে আগ্রহী। যেহেতু এখন রাজনৈতিক সরকার নেই, তাই প্রবাসী রাজনৈতিক দলের শাখা কর্তৃক আয়োজনের ব্যাপারও নেই। আর এর মাধ্যমে আমরা প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সমস্যা, সম্ভাবনা এবং রাষ্ট্র সংস্কারে প্রবাসীদের বিভিন্ন বিষয় আমরা সরাসরি সরকার প্রধানের সামনে তুলে ধরতে চাই।
প্রসঙ্গত তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগগ্রস্তদের জন্য বাংলাদেশ সোসাইটি প্রাথমিকভাবে ৩০ লক্ষ টাকার একটি তহবিল প্রদান করেছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই স্মারকও প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করতে চাই। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকার নিয়েছেন তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব সংμান্ত একটি স্মারকলিপিও আমরা তাঁর হাতে হস্তান্তর করতে চাই।
আব্দুর রব মিয়া বলেন, আমরা বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থয়ী মিশন, নিউইয়র্ক কনস্যুলেট এবং প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যোগাযোগ শুরু করেছি। সবশেষে তিনি সোসাইটির আয়োজনে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা আয়োজনে গণমাধ্যম সহ সকলের সহযোগিতা ও ভূমিকা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী বলেন, সবাই সহযোগিতা করলে সোসাইটি এককভাবেই বাংলাদেশের সরকার প্রধান ড. ইউনূসকে নাগরিক সংবার্ধনার আায়োজন করবে। এজন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে এবং অর্থেরও কোন সমস্যা হবে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বলেন, আমরা এককভাবেই ড. ইউনূসকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করতে চাই। এজন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ কনসুলেটের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন। প্রসঙ্গত তিনি আরো বলেন যে, সরকারের নির্দেশে যদি দূতাবাস-মিশন ও কনস্যুলেট ড. ইউনূসের সংর্বধনার আয়োজন করে যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সোসাইটির সম্মানজনক অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে চায়।
আব্দুর রহীম হাওলাদার বলেন, বাংাদেশ সোসাইটির প্রবাসী বাংলাদেশীদের অরাজনৈতিক সংগঠন। তাই নির্দলীয় সরকার প্রধান হিসেবে আমরা সোসাইটির পক্ষ থেকেই ড. ইউনূসের সংবর্ধনা আয়োজন চাই। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে বিমান চালুর বিষয়টি শুধু আশ্বাসের মধ্যেই ছিলো। আমরা আশা করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিমান চালু সহ প্রবাসীদের অন্যান্য সমস্যারও সমাধান করবেন।