নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদার সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় (ভিডিও সহ)
:নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা ৬ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। তার নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় কনস্যুলেট জেনারেলের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল এস এন নাজমুল হাসান, ফার্স্ট সেক্রেটারি (কন্স্যুলেট) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী, কাউন্সেলর ও হেড অব চ্যান্সেরি ইসরাত জাহান এবং থার্ড সেক্রেটারি আসিব আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে যোগদানের পর মিডিয়ার সাথে এটাই কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদার আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ।
নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল হিসেবে নাজমুল হুদা তাঁর লক্ষ্য, কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগসমূহের ব্যাপারে সবাইকে অবহিত করেন। তিনি কনস্যুলেটের সেবার মান উত্তোরোত্তর বৃদ্ধিতে কনস্যুলেট জেনারেলের আন্তরিকতা ও নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার কথা ব্যক্ত করেন। এরপর তিনি বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতায় সমাজ ও দেশ গঠনে মিডিয়ার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে করেন। গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়ে নবনিযুক্ত কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বললেন, মিডিয়া আমার প্রতিপক্ষ নয়, স্টেক হোল্ডার তথা অংশিজন। ব্যক্তিগতভাবে আমি ‘থ্রি পি’ থিউরি ফলো করি। প্রথম ‘পি’ হচ্ছে আমার পিপুল অর্থাৎ কম্যুনিটি। তাই কম্যুনিটির সাথে নিবিড় সম্পর্ক রচনায় বিশ্বাসী আমি। দ্বিতীয় ‘পি’ হচ্ছে প্রটোকল। ডিপ্লম্যাটিক মিশনে কাজ করলে ডিগনিটরিজরা আসবেন। তাদেরকে অভ্যর্থনা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হয়। তৃতীয় ‘পি’ হচ্ছে প্রেস। মিডিয়ার সাথে সব সময় একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখতে হবে। সেজন্যে মিডিয়ার সাথে আমার পার্টনারশিপ এবং কন্সট্রাক্টিভ রিলেশন থাকবে। এই তিন পি যদি আমরা ফলো করি তাহলে কন্স্যুলেটের কাজে আরো গতি আসবে। কাজ ভালো হবে এবং মানসম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যেই আমি আমার সহকর্মীগণের সাথে এসব বিষয়ে কথা বলেছি।
মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা বর্ণনা করে কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা এ ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহবান জানান। তিনি বলেন, সকলের প্রচেষ্টায়, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। যা ২০২৬ সালে পূর্ণরূপে স্বীকৃতি পাবে। তিনি ২০০৮-০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান/ক্রমউন্নয়নশীল অর্থনৈতিক সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। তিনি সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ বিষয়সমূহ জনগণের সামনে, বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার আহ্বান জানান। কনসাল জেনারেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আয়নার সাথে তুলনা করে বলেন, তারা ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের অশেষ কল্যাণ সাধন করেন।স্বাগতিক দেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা, অর্থনৈতিক কূটনীতি, জনবান্ধব কূটনীতিকে কনসাল জেনারেল তাঁর নিউইয়র্ক মিশনের মূল লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেন। বাংলাদেশের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যোগসূত্র রক্ষায়, প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রচার ও প্রসারে কনস্যুলেট জেনারেলের নিরবছিন্ন প্রচেষ্টায় সকল প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডাকযোগে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের বিষয়, সর্বজনীন পেনশন স্কীমসহ বিভিন্ন বিষয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করেন।
উপস্থিত সাংবাদিকগণ নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় একটি প্রশস্ত, যুগোপযোগী ভবনে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল স্থানান্তরের জোর দাবী জানান। তারা নিউইয়র্কে সোনালী ব্যাংক/বাংলাদেশের যে কোন রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ শাখা খোলা এবং নিউইয়র্কস্থ মিশনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যাপারেও কাজ করার জন্য কনসাল জেনারেলকে অনুরোধ করেন।
উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্ন ও দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর জন্য নতুন প্রশস্ত যুগোপযোগী ভবন ক্রয়ের ক্ষেত্রে কনস্যুলেট জেনারেলের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা প্রবাসে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য সরকার গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নিউইয়র্কে ব্যাংকের শাখা খোলার বিষয়ে প্রবাসীদের দাবী সরকারকে অবহিত করবেন মর্মেও তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, এমনি জরাজীর্ণ এবং খুবই ক্ষুদ্র পরিসরের ভবণে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রতি কর্মদিবসে গড়ে আড়াই শতাধিক প্রবাসীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে রয়েছে ডাকযোগে সার্ভিস। এছাড়া দৈনিক টেলিফোন রিসিভ করা হচ্ছে ৫ শতাধিক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এনভিআর (নো ভিসা রিক্যুয়ার্ড) প্রদান করা হয় আবেদন গ্রহণের দিনেই। তিনি জানান, জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১০ মিশনে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৪০ মিশনের মধ্যে নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটও রয়েছে, তখন প্রবাসীরা এখান থেকেই এনডিআই পাবেন।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ প্রবাসী বাংলাদেশেীদের প্রতি কনস্যুলেট জেনারেলের চলমান সেবা ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য তারা কনসাল জেনারেলকে ধন্যবাদ জানান। সভায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ রক্ষায় কনস্যুলার সেবা প্রদানে কনসাল জেনারেল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।