নিউইয়র্কে বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’র নির্বাচন কমিশনের সংবাদ সম্মেলন : বানোয়াট-মিথ্যা অপবাদ বর্জন করে বিয়ানীবাজারবাসীর ঐতিহ্য ধরে রাখার আহ্বান (ভিডিও সহ)
নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক : নিউইয়র্কে বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’র নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনের নির্বাচন কমিশন। ১৩ নভেম্বর সোমবার ওজনপার্কে বিয়ানীবাজার সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বাচন নিয়ে অপপ্রচার, অপবাদ বর্জন করে বিয়ানীবাজারবাসীর সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সব মহলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহি উদ্দিন, কমিশনার হেলাল আহমদ, মোহাম্মদ আব্দুন নূর এবং নূরুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার ছালেহ আহমদ মনিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “গত ২২শে অক্টোবর ২০২৩ রবিবার সমিতির ২০২৪-২৫ সালের “কার্যকরী পরিষদ” নির্বাচনের জন্য একটি সুষ্ঠ, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গত ৩০শে অক্টোবর সোমবার ওজনপার্কস্থ মমোস পার্টি হলে সচেতন বিয়ানীবাজারবাসীর ব্যানারে মিসবাহ-অপু পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও সদ্য সমাপ্ত বিয়ানীবাজার সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিত অনেক প্রতিনিধি ও সদস্যবৃন্দ, ২২শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত সমিতির সুন্দর নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হওয়া নির্বাচনকে হীন লক্ষ্যে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মানষে এক সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভায় লিখিত বক্তব্য ও বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য আমরা সংবাদপত্র, টিভি ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অবগত হই। সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভায় একক ভাবে ভূয়া তথ্য উত্তাপন, অসত্য ও কূরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান সহ যে ভাষা ব্যবহার করে বিয়ানীবাজারবাসীকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করেছেন আমরা নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্যবৃন্দ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মিথ্যা তথ্য সম্বলিত বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং অকথ্য অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারের জন্য সমগ্র বিয়ানীবাজারবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচন চলাকালীন এবং শেষ সময়ে সমাজের বিভিন্ন সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ এবং সাংবাদিকগণের স্বাক্ষাতকার সংবাদপত্র, টিভি ও সামাজিক মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে।
বিয়ানীবাজারের বিভিন্নস্তরের মানুষের নির্বাচন নিয়ে গঠনমূলক, ইতিবাচক এবং প্রশংসামূলক মন্তব্যের পর, এমনকি নির্বাচনে মিছবাহ-অপু পরিষদের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে কমিউনিটিতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। উদ্ভট মিথ্যা তথ্য ও আপবাদের প্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য তুলে ধরছি।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোটের কার্যক্রম শুরু করার পূর্বে উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যকরী পরিষদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিদ্বন্দ্বি উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে টেস্টিং ভোট গ্রহণ করে সকলের সম্মতিতে ভোটের কার্যক্ক্রম শুরু করেন। ভোটিং মেশিন বন্ধ করার আগে প্রতিদ্বন্দ্বী উভয় পক্ষ এবং নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সর্বশেষ ভোট গ্রহনের মধ্য দিয়ে ভোটিং মেশিন বন্ধ হবার চূড়ান্ত ঘোষনা দেন। ভোটিং মেশিনের সম্পূর্ন কাজ বন্ধ হবার পর মূল মেশিন থেকে ফলাফল সিট বিধি মোতাবেক প্রিন্ট করে স্বাভাবিক নিয়মে বেসরকারী ফলাফল ঘোষনা করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এখানে নির্বাচন কমিশনের বা কোন কমিশনারের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নাই। এ ধরনের বক্তব্য অবান্তর। উল্লেখ্য যে, ফলাফল পুনরায় প্রিন্ট করার অনুরোধ আসলে কমিশনের পক্ষে মেশিনের অপারেটরকে সাবার সম্মুখে হাজির করে পুনরায় ফলাফল প্রিন্ট করার নির্দেশ দিলে অপারেটরের উত্তর ছিল ”একই ফলাফল প্রিন্ট আসবে” বিধায় আমরা সময় ক্ষেপন না করে ফলাফল ঘোষনা করি।
সংবাদ সম্মেলনে-নির্বাচন কমিশনারদের বৈঠক করার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যা অবান্তর ও অসাংবিধানিক। বরঞ্চ নির্বাচন কমিশনারদের গুরুত্বপূর্ন বৈঠকে অযাচিত কারো অনুপ্রবেশ বা অবস্থান করা অসাংবিধানিক ও অন্যায়। জাল ভোটের বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন তার ব্যাখ্যা হলো, $২০ ডলার ফি জমা দিয়ে জাল ভোট চ্যালেঞ্জ করার বিধান আছে। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কোন পক্ষই জাল ভোটের ব্যাপারে নিয়ম মাফিক চ্যালেঞ্জ করেন নাই, উপরন্ত বিভিন্ন এজেন্ট জাল ভোটার বলেই ভোটারের শার্টের কলার চেপে ধরার পর চেঁচামেচি করে পরিবেশ বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা চালান। উভয় প্রতিদ্বন্ধি প্যানেলের এজেন্ট থাকা স্বত্বেও কোন প্রার্থী কিভাবে জাল ভোট সনাক্ত করতে কেন্দ্রের ভিতরে গাঁয়ের জোরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অবস্থান করেন তা আমাদের প্রশ্ন। দ্বিতীয়তঃ ২০২১ সালের জনৈক সাবেক নির্বাচন কমিশনার এই নির্বাচনে মিছবাহ-অপু পরিষদের এজেন্টের দায়িত্ব পালন করে জাল ভোটের যে অসত্য তথ্য বা বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াটও কল্পনাপ্রসূত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গঠনতন্ত্রের ১৫(জ) ধারা অনুসারে নির্বাচনী বিধিমালা সহ ভোটকেন্দ্রে কোন প্রকার অনিয়মের অভিযোগ থাকলে তাহা নির্বাচন চলাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লিখিতভাবে অবহিত করার বিধান থাকলে ও এ সময়ের ভিতরে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় নাই। ভোটিং মনিটরে ভোট প্রদানের লাইনের প্রবেশ মুখে ১০নং ভোটিং মনিটর থাকার কারণে বেশীরভাগ ভোটার এই মনিটর ব্যবহার করে ভোট প্রদান করেছেন। দূরে থাকার কারণে অন্য মনিটরে মাত্র ১৩৯ টি ভোট জমা হয়। কাজেই এই বিষয়ে কল্পনা প্রসূত তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা সমিচীন নয়।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটার তালিকায় কোন সংশোধন, সংযোজন বা পরিবর্তন করা হয় নাই। কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক সরবরাহকৃত ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোট প্রহণ সম্পন্ন করা হয়। যাহা নমিনেশন প্যাকেজের সাথে প্রত্যেক প্রার্থীকে সরবরাহ করা হয়। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোটের সংখ্যা- লাইফ মেম্বার ৮৬৫, সিনিয়র মেম্বার ৭১০, এবং জেনারেল মেম্বার ৬০৭৭, সর্বমোট ৭৬৫২ জন। তাঁদের সংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের ভোটার সংখ্যা ৭৯৭৯ জন, যাহা বিভ্রান্তিকর। একই ভাবে তাঁদের প্রদত্ত অতিরিক্ত ভোট প্রদানের তথ্যও ভূয়া এবং উদ্দেশ্যপ্রনোদীত। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রাথমিক ফলাফলের সাথে চূড়ান্ত ফলাফল সম্পূর্ন সঠিক। এখানে ভোট কমবেশী হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
সমিতির জনৈক সদস্যের অলীক বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি গোচরে আসে। মাননীয় সদস্যের বক্তব্য ছিল — “নির্বাচন কমিশনার নাকি ভোটিং রিসিপ্ট বইএর ১০ পাতা কম একখানা রিসিপ্ট বই পোলিং টেবিলে প্রদান করেছেন”। তিনি যে ভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এবং তাঁহার বক্তব্যে যা বুঝাতে চেয়েছেন তাহা সম্পূর্ণ অনুমান প্রসূত – ঢাহা মিথ্যা। আসল সত্য হচ্ছে – নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পর্যায়ে লাইফ মেম্বার এর ১নং পোলিং টেবিল ছাড়া অনেক গুলো পোলিং টেবিলে ভোটার উপস্থিতি না থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। উক্ত পোলিং টেবিলগুলোর আংশিক ব্যবহৃত একটি ভোটার রিসিপ্ট বই ১নং পোলিং টেবিলে দেওয়া হয়েছে মাত্র। এখানে রিসিপ্টের পাতা ছিঁড়া বা তসরূপের প্রশ্নই আসেনা। এ সকল বক্তব্য সম্পূর্ন উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও অপপ্রচার।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মহল তথ্য বিভ্রাট, বানোয়াট ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সুষ্ঠ সুন্দর নির্বাচনকে কলুষিত করার হীন প্রয়াস চালাচ্ছেন। আমরা ঐতিহ্যবাহী বিয়ানীবাজার বাসীকে সত্য ও সুন্দর তথ্য গ্রহন করার আহবান জানাচ্ছি। মিথ্যা তথ্য ও অপবাদ বর্জন করে বিয়ানীবাজারবাসীর ঐতিহ্য ও সুনাম ধরে রাখুন।