Today Is- Monday-18 Nov 2024

নিউইয়র্কে মা আর ছোট ভাইয়ের সামনেই পুলিশের গুলিতে নিজ ঘরে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও নিহত

নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিওর। ২৭ মার্চ বুধবার ১৯ বছর বয়সী যুবক উইন রোজারিওকে বাংলাদেশিবহুল ওজন পার্ক এলাকার ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ এভিনিউর নিজ বাসায় মা আর ছোট ভাইয়ের সামনেই গুলি করে পুলিশ। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মা বাবার অভিযোগ, তার নিরপরাধ ছেলেকে হত্যা করেছে পুলিশ। বাসা থেকে নিজেই ৯১১ নম্বরে কল করেন উইন রোজারিও। পুলিশকে জানান, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে মানসিক রোগের ইতি টানতে চান।
উইনের মা ইভা কোস্টা বলেন, উইন মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। ইন্টারভিউতে টিকে গেছেন। মানসিকভাবে সে সুস্থ না থাকলে ইন্টারভিউতে টিকে কীভাবে?
২৭ মার্চ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ফোন কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ জানায়, বাড়িতে পৌঁছে উইন রোজারিওকে কাঁচি হাতে দেখতে পান তারা। এসময় কাঁচি নিয়ে তেড়ে আসলে পুলিশ প্রথমে টেজার দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে। এ সময় উইন রোজারিওর মা চলে আসেন এবং উইন আক্রামণাত্মক হয়ে উঠলে পুলিশ গুলি ছুড়ে। মায়ের সামনে লুটিয়ে পড়েন উইন রোজারিও।
নিহতের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেছেন, তার ছেলে নিজেই যেহেতু বলেছে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাহলে তাকে কেন গুলি করে মারতে হলো? এসময় পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেন তিনি। এ নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক পুলিশ দাবি করেছে, নিহত তরুণ মানসিক সমস্যায় ছিলেন। পুলিশের চিফ অব পেট্রল জন ছেল আরও জানান, আমাদের ওই দুই অফিসার দ্রুত ওই বাসায় গিয়েছিল জরুরি সহায়তার জন্য। এমন অবস্থায় ওই তরুণের মৃত্যু হওয়া খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। এটা উইনের পরিবার এবং আমাদের পুলিশ বাহিনীর জন্যও খুবই কষ্টের। ওরা এসেছিল উইনের ডাকে সহায়তা করতে। তারা কখনওই কোনও ধরনের চাপ প্রয়োগে আগ্রহী ছিলেন না। উইন যদি সাড়া দিতেন তাহলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
এনওয়াইপিডির ফোর্স ডিভশন ইউনিটের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত দুই অফিসারের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
উইনের ছোটভাই উৎস জানায়, মাসে একবার করে সে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়তো। অন্যসময় সে খুবই ভদ্র ও নম্র থাকতো। তার লক্ষ্য ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়ার। নিউইয়র্ক সিটির জন এডামস হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা উইন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়া নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। বিলম্ব সইছিল না। সে কারণে সে ওষুধও নিয়মিত গ্রহণ করছিল না।
নিজ ঘরে মানসিক অসুস্থ তরুণের এমন মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও (৫২) জেএফকে এয়ারপোর্টে কাজ করেন। এই দুর্ঘটনার সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। সংবাদ পেয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। গাজীপুরের সন্তান ফ্রান্সিস সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন ২০১৪ সালে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই জেএফকে এয়ারপোর্টে চাকরি করেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ নিহতের ঘটনার বিচার চেয়েছেন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির নেতৃবৃন্দ। যুক্তরাষ্ট্রের ওজন পার্কের বাসায় নির্মমভাবে গুলি করে ইয়ন রোজারিওকে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাওয়ার পাশাপাশি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে নতুনধারা।

CATEGORIES
Share This