নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : বিশ্ব মা দিবস পালিত হলো ১২ মে রোববার। মায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়েছে দিবসটি। বিশ্ব মা দিবসে মায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। দিবসটি উপলক্ষে ‘মায়ের গল্প শুনি’ শীর্ষক ব্যতিক্রমী এক আয়োজন করে ‘ঠিকানা’। সেল ফোন কোম্পানি রিভারটেলের সৌজন্যে ভিন্নধর্মী এই অনুষ্ঠানটি হয়। জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ অ্যাভিনিউয়ের রিভারটেল কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ১২ মে রোববার নিউইয়র্কের বিভিন্ন অঙ্গনের সুপরিচিত নারী ও মায়েরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা শোনান নিজ নিজ মায়ের গল্পÑমায়ের সঙ্গে তাদের প্রিয় মুহূর্তগুলোর কথা। একই সঙ্গে জানান মায়ের প্রতি সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। স্মরণ করেন মায়ের অবর্ণনীয় কষ্ট আর অবদানের কথা। গল্প বলার মধ্য দিয়ে সব নারীই চেষ্টা করেছেন নিজ নিজ মাকে সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে বসানোর।
ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঠিকানার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাংবাদিক রেজওয়ানা এলভিস। মূল আয়োজনে ছিলেন ঠিকানার সিইও মুশরাত শাহীন ও রিভারটেলের প্রধান রুহিন হোসেন। তাদের সহযোগিতা করেন মাহমুদ, হুমায়রা, মুহিবুরসহ ঠিকানা পরিবার।
অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত মায়েরা অংশ নেন। এর মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সিলর এবং হেড অব চ্যান্সেরি ইশরাত জাহান, চিত্রনায়িকা মৌসুমী, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, সাংবাদিক ও লেখক শামসাদ হোসেন, ঠিকানার সিনিয়র সাংবাদিক নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী, বাপার পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন, বারী হোম কেয়ারের সিইও মুনমুন হাসিনা বারী, কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটনি অফিসের স্টাফ রোকেয়া আক্তার, আশা হোম কেয়ারের কর্ণধার এশা রহমান, লেখক পলি শাহীনা, রওশন হাসান,উইলি মুক্তি, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, রওশন হক, রূপা খানম, সমাজসেবক রুবাইয়া রহমান, জনপ্রিয় খবর পাঠিকা নিম্মি নাহার, বিশিষ্ট লেখিকা শামিমা জামান, মিসেস রেখা আহমেদ,সালমা ফেরদৌস,লুসি হাসান, সুলতানা ডলি, রুমানা আহমেদ, তাহমিনা শহিদ, ডালিয়া চৌধুরী, ভায়লা সেলিনা, এলি বড়ুয়া, ছড়াকার ছন্দা বিনতে সুলতান, ফ্যাশন ডিজাইনার নুশরাত এলিন, মা ফাউন্ডেশনে কর্ণধার আনোয়ারা আনা, সাংবাদিক জেলি আহমেদ, সুতপা চৌধুরী, রিয়েলটর রিনা সাহা, কণ্ঠশিল্পী মরিয়ম মারিয়া, তামান্না আহমেদ, বুশরা টুবা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঠিকানার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান, আশা হোম কেয়ারের কর্ণধার ইঞ্জিনিয়ার আকাশ রহমান, উৎপল চৌধুরী,সৈয়দা নাজনীন শাহীন, নাদিয়া শাহীন, আমাইরা হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি মায়েরা তাদের মায়ের সঙ্গে প্রিয় মুহূর্তগুলো বলার পাশাপাশি মায়ের অবদানের কথা তুলে ধরেন। নিজেদের মায়ের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আবার অনেকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অল্প বলেই গল্প শেষ করেন। মায়ের গল্পের পাশাপাশি ছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। ছিল নৃত্য, গান ও কবিতা আবৃত্তি। আসলে সেদিনের সেই দুপুর ও বিকেলটি হয়ে উঠেছিল প্রবাসী বাংলাদেশি নারীদের এক মিলনমেলা।
নিউইয়র্কের সব ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত মায়েদের এভাবে আমন্ত্রণ ও সম্মান জানানোর আয়োজন এর আগে আর হয়নি। ঠিকানাই প্রথম করল। নারীদের নিয়ে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এম এম শহীনকে ধন্যবাদ জানান অতিথিরা। ঠিকানার আমন্ত্রণে মা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় এম এম শাহীনও মায়েদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকানা পরিবারের সদস্য ও লিভারটেলের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আসা বেশির ভাগ মা-ই তাদের জীবনে সফলতার পেছনে মায়ের অবদানের কথা বলেন। যারা মাকে হারিয়েছেন, তারা জানান নিজেদের কষ্টের কথা। আর যারা মাকে দেশে রেখে এসেছেন, তারা তুলে ধরেন মাকে মিস করার কথা।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের হেড অব চ্যান্সেরি ইশরাত জাহান বলেন, আমরা অনেক ভাইবোন। এ কারণে আমাদের নিয়ে মাকে সারাক্ষণই ব্যস্তÍ থাকতে হতো। পরিবারের সবার খাবার ও নাশতা মা নিজ হাতে বানাতেন। আমাদের পরীক্ষার সময় এলে মা রাতে জেগে থাকতেন। সারা দিন সংসারের সব কাজ করার পরও রাতে আমাদের চা বানিয়ে দিতেন। মায়ের অবদানে আমরা সব ভাইবোন সফল হয়েছি। আমার বাবার অবদানও অনেক।
চিত্রনায়িকা মৌসুমী মায়ের গল্প শোনানোর পাশাপাশি তার সন্তানদের কথাও তুলে ধরেন। তিনি নিজ নিজ মাকে সম্মান ও ভালোবাসার জন্য আগামী প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আসা একজন মা বলেন, আমি ২১ বছর বয়সে এ দেশে এসেছি। এখন পর্যন্ত এখানেই আছি। আমার মা দেশে থাকেন। তাকে জড়িয়ে ধরার যে অনুভূতি, তা কোনো দিন ভোলার নয়। কারণ মায়ের গায়ের যে উষ্ণতা, তা ভুলে থাকা যায় না। মায়ের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলি। তবে মাকে খুব মিস করি।
আরেকজন মা বলেন, কেবল মা দিবসেই যেন আমরা মায়ের প্রতি ভালোবাসা না জানাই। আমরা প্রতিদিনই মাকে ভালোবাসব। আসলে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত আমরা মাকে ভালোবাসব।
অনুষ্ঠানে পঞ্চাশ এর অধিক মা উপস্থিত ছিলেন। সময়স্বল্পতার কারণে অনেক মায়ের গল্পই শোনা হয়ে ওঠেনি। সে জন্য ঠিকানার কর্ণধার এম এম শাহীন দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে উপস্থিত মায়েদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে ছিল ঠিকানার লগো-সংবলিত ছবি তোলার ব্যবস্থা। অনুষ্ঠান শেষে সেসব ছবি আগত অতিথিদের দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরুষেরা মায়েদের অভ্যর্থনা জানান। মায়েদের ফুল উপহার দেওয়া হয় আর সন্তানদের জন্য ছিল মিনি চকলেট প্যাকেট। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল মুখরোচক খাবার। শেষ বিকেলে একরাশ তৃপ্তি নিয়ে হাসিমুখে বিদায় নেন অতিথিরা। প্রেস বিজ্ঞপ্তি