নিউইয়র্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে পিপল আপ এর প্রীতি বৈঠক চ্যাম্পিয়ন হবার জন্যই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছি : ড. আবু জাফর মাহমুদ
নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : আমেরিকার মূল ধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সকল গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছেন পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস-পিপল আপ এর প্রেসিডেন্ট ডক্টর আবু জাফর মাহমুদ। ১৫ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে পিপল আপের আয়োজনে গণমাধ্যমের সঙ্গে এক প্রীতিবৈঠকে এমন আহ্বান জানান তিনি। প্রীতিবৈঠকে নিউইয়র্কে প্রকাশিত জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্র, অনলাইনের সম্পাদক, সাংবাদিক ও টেলিভিশনের নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর, আমেরিকার মূলধারার রাজনীতির নিবিড় পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও পিপল আপের প্রেসিডেন্ট ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো মানুষ আমেরিকামুখী হচ্ছেন কেবল মাত্র উন্নত জীবন-জীবিকার সন্ধানে । এদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা-চিকিৎসা সেবা, আবাসন, নাগরিকত্বসহ নূন্যতম মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আর এসব চাহিদা বিবেচনায় নাগরিকদের অধিকার প্রশ্নে পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস, একটি নতুন অভিযাত্রা। তিনি বলেন , আমেরিকার ডেমোক্রেট প্রাইমারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জেগে উঠেছে পিপল আপের রাজনৈতিক প্লাটফরমের তৎপরতা। এই রাজনৈতিক প্লাটফরম এখানকার গণতান্ত্রিক রাজনীতির অপরিহার্যতার জায়গাগুলোতে রেখেছে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা। এর উদাহরণ হিসাবে তিনি, গত ২৫ জুন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নির্বাচনের পিপল আপ এর জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, ১৪ জুন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নির্বাচনের আগ্রীম ভোট শুরুর আগের দিন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হারইটস-এ ছিল বর্নাঢ্য ক্যাম্পেইন, ৩ মে জ্যাকসন হাইটসে ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে নিউইয়র্ক স্টেট এর জনপ্রিয় অ্যাসেম্বলি ওম্যান জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস ও অ্যাসেম্বলি ম্যান স্টিভেন রাগাকে পিপল আপের পক্ষ থেকে এনডোর্স করাসহ নানান উদ্যাগের কথা তুলে ধরেন। বলেন, ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদে তার নাম অর্ন্তভুক্ত হওয়া মানেই আমেরিকার মূল ধারার পার্টি কমিটির নীতি নির্ধারক পর্যায়ে বাংলাদেশ ও নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী অধিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকে তুলে ধরা।
ডক্টর আবু জাফর আরো বলেন, আমেরিকায় বসবাসরত অভিবাসীদের জীবনে যেসব অসঙ্গতি ও নিয়ম কানুনের ব্যতয় আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছে পিপল আপ। এরই মধ্যে এ বিষয়গুলোতে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে নির্বাচিত কর্মকর্দের মাঝে। সরাসরি যোগাযোগ করা হয়েছে নির্বাচিত প্রায় দুইশতাধিক কর্মকর্তার সাথে। পরবর্তীতে স্টেট এবং ফেডারেলের কাছেও ধাপে ধাপে তা তুলে ধরা হবে। ড. মাহমুদ বলেন, আমাদের নাগরিক জীবনে, শিক্ষাক্ষেত্রে, সরকারি চাকরিতে যারা আছেন তাদের আমেরিকার জন্য দেশপ্রেম বাড়ানোর বিকল্প নেই। এদেশে বাংলাদেশি ভোটারদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে জানিয়ে ডক্টর আবু জাফর আরো বলেন, ভোটের মাধ্যমে অসংগতিগুলোর বিরুদ্ধ জবাব দিতে হবে যাতে দলগুলো মানুষের পক্ষে থাকে, ভোটারদের পক্ষে থাকে। প্রীতিবৈঠকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন , এ আন্দোলন পিপল আপের একার নয়, পিপল আপ যখন ভাল কিছু করবে , তাতে বাংলাদেশী আমেরিকানরা লাভবান হবেন, তাদের সুনাম হবে। বলেন, আমরা ব্যর্থ হবার জন্য নয় বরং চ্যাম্পিয়ান হবার জন্যই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছি।
‘পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস -পিপল আপ’ যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারার রাজনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন এক সংযোজন উল্লেখ করেন নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাংলা গণমাধ্যমের উদ্যোক্তা, সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ। তারা বলেন, এদেশের ফেডারেল কংগ্রেস থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটির নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মাঝে এই রাজনৈতিক প্লাটফরম যেভাবে সমাদৃত হয়েছে, তা এক বড় দৃষ্টান্ত। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তথা এশিয়ার মানুষের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুষ্ঠানে অনেকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ । তিনি বলেন, নিউইয়র্কে মূলধারার রাজনীতির যে যাত্রা তা শুরু হয়েছিল ৯০ দশক থেকে। কিন্তু আবু জাফর মাহমুদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্যটা হলো যারা মূল ধারার রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী তারা অন্যের ব্যানার , অন্যে পতাকা বহন করেছেন করে কিন্তু এখানে পিপল আপের ব্যানার, ফেস্টুন প্লার্কাড তুলে ধরেছেন আমেরিকানরা। এখানেই আবু জাফর মাহমুদের বিশেষত্ব । তিনি একজন বাংলাদেশী হিসাবে আমেরিকার মূল ধারার রাজনীতিতে যে ভাবে শেকড় সৃষ্টি করছেন। সেটিকে মূল্য দেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, আবু জাফর মাহমুদ যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বলতে গেলে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করি । দুয়েকজনের আলাদা মত থাকতেই পারে। বলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে ৩ লাখ বাংলাদেশীর বসবাস এবং তারা সবাই মনে প্রাণে ডেমোক্র্যাটদের। গত ৩০ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে , ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিবার্চনকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামে হাতে গোনা কয়েকজন বাংলাদেশী এসেছেন, নিবার্চন করেছেন আবার র্নিলিপ্ত হয়ে গেছেন। সবচেয়ে দু:খজনক হলো, একজন ডেমোক্রাটিক পার্টির বাংলাদেশী নেতার সঙ্গে দলের আরেকজন বাংলাদেশি নেতার কোন সৌহার্দ্যপূর্ন সর্ম্পক নেই । যে কারণে বাংলাদেশী কমিউনিটি ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। এতো ভোটার থাকা সত্বেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোন নিবার্চনে তারা সফল হতে পারছে না। এমন একটা সময়ে আবু জাফর মাহমুদ যে সংগঠনটি করেছেন সেটি গুরুত্বপূর্ন । এখানে যেসব এজেন্ডা দিয়েছেন তা সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়নে লবিষ্ট নিয়োগ দিতে হয়, ওয়াশিংটনের সাথে যোগাযোগ করতে হয় । আবু জাফরের সেই পরিমাণ নিষ্ঠা ও অর্থ আছে, স্বপ্ন পূরণের আত্মবিশ্বাসও আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এনওয়াই কাগজ সম্পাদক মনওয়ারুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তি হিসাবে জাফর মাহমুদ ধনী পরিবারের সন্তান হলেও মেহনতি , খেটে খাওয়া মানুষের জন্য লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বলেন , তার হাত ধরে আমেরিকায় যারা মূল ধারার রাজনীতিতে অংশ নিতে চান তারা এগিয়ে যাবেন , তার আর্দশকে সামনে রেখে। জন্মভূমির সম্পাদক রতন তালুদকার বলেন , রাজনীতি এবং সমাজে কিছু করার জন্য আবু জাফর সব সময় চেষ্টা করেছেন। পিপল আপ এর মাধ্যমে তিনি যে তার ১৪ দফা এজেন্ডা সামনে এনেছেন তা ফেডারেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে ।
রানার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, আবু জাফর মাহমুদের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্কে মানসম্মত বস্তুনিষ্ঠ একটি সংবাদপত্র প্রকাশের আহ্বান জানান। বলেন, আবু জাফর মাহমুদ দুরদর্শীতার সাথে ভবিষ্যত সর্ম্পকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন । যা আমেরিকান বাংলাদেশীদের জন্য পথ নির্দশক হিসাবে কাজ করবে। সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, পিপল আপের মতো এমন প্রচেষ্টা দেখে গণমাধ্যমকর্মীরা মুগ্ধ। তিনি বলেন পিপল আপ এর ১৪টি এজেন্ডার সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম তথা আমেরিকার আগামী দিনের উন্নয়নের সম্পর্ক রয়েছে।
দ্য নিউ জেনারেশন সম্পাদক শাহ জে চৌধুরি স্যার ডক্টর আবু জাফরকে ধন্যবাদ জানান এমন আয়োজনের জন্য। মানসিক ও শারিরীকভাবে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাসও দেন তিনি। বাংলাদেশ এনওয়াই এর সম্পাদক রিমন ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিবার্চন ও রাজনীতি সর্ম্পকে পুরোপুরি তথ্য সমৃদ্ধ না হয়েও অনেকে মূলধারার রাজনীতি করছেন । কেবলমাত্র সস্তা প্রচারের জন্য। এক্ষেত্রে আবু জাফর মাহমুদ ভিন্ন , অনন্য । পিপল আপ সম্পর্কে অনেকেরেই প্রশ্ন রয়েছে, কিন্তু আমার কাছে প্লাটফরমটি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রয়েছে। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই , এটি একটি পুরোপুরি রাজনৈতিক সংগঠন, এবং আবু জাফর মাহমুদ মূল ধারার রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি বলেন , এই মানুষের অবদান উজ্জ্বল করবে এই কমিউনিটিকে। তার নতুন চেতনা নিয়ে যে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী আমেরিকানদের অনুপ্রাণিত করবে। দ্য বে ওয়েভ এর নির্বাহী সম্পাদক অভিক সানোয়ার রহমান বলেন, আমেরিকার মূল রাজনীতিতে অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যে আন্দোলন, তার জন্য স্যার ডক্টর আবু জাফরের উদ্যোগ সময়োপযোগী।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার নির্বাহী সম্পাদক মঞ্জুরুল হক বলেন, ডক্টর আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশী কমিউনিটি বির্নিমানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। যা টানা ৪০ বছর এই কমিউনিটিতে নেতৃত্ব দিয়েও অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন। গণমাধ্যমের উন্নয়নে তার যে ভূমিকা তা অনস্বীকার্য। প্রীতিবৈঠক পরিচালনা করেন জয় বাংলাদেশ মিডিয়া’র সমন্বয়ক সাংবাদিক আদিত্য শাহীন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, দেশ সম্পাদক মিজানুর রহমান, চ্যানেল আই এর যুক্তরাষ্ট্র অফিস প্রধান রাশেদ আহমেদ, সাপ্তাহিক খবর সম্পাদক ফরিদ আলম, সাপ্তাহিক ঠিকানার বার্তা সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, এটিএন বাংলা ও ডিবিসি’র সাংবাদিক কানু দত্ত, ইউএসএ নিউজ অনলাইন এর সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, প্রথম আলোর নিউইয়র্ক প্রতিনিধি সাখাওয়াৎ লিটন, মোহাম্মদ হোসেন দীপু, সাপ্তাহিক আজকাল এর সাংবাদিক আবু সায়েম, সাংবাদিক সৌরভ ইমাম, আমানুল ইসলাম, আলোকচিত্রী এম বি হোসেন তুষারসহ জয় বাংলাদেশ মিডিয়া ইনক এর সাংবাদিকবৃন্দ।