Today Is- Friday-22 Nov 2024

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমা ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণে সকল অংশীজনের সমন্বয়ে ২০২৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক একটি উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হল সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলেশনে

নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেছেন, ” আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে রেজ্যুলেশন গৃহীত হওয়ার পরে প্রদত্ত বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি। ওআইসি এবং ইউরোপিও ইউনিয়ন কর্তৃক যৌথভাবে উপস্থাপিত “মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবধিকার পরিস্থিতি” শীর্ষক রেজ্যুলেশনটি ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। জাতিসংঘের ১০৬ টি সদস্যরাষ্ট্র এটি কো-স্পন্সর করে যা এই রেজ্যুলেশনের প্রতি ব্যপক আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রতিফলন।
রেজ্যুলেশনটিতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনসহ এই সংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে, সামগ্রিক পর্যালোচনার মাধ্যমে, একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য, সকল অংশীজনের সমন্বয়ে ২০২৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক একটি উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ। উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সভা চলাকালে, রোহিঙ্গা বিষয়ে এই উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এই বছর, রোহিঙ্গা বিষয়ক রেজ্যুলেশনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানসহ সকল শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাঁদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি হত্যা, ধ্বংস, বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা, মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা, এবং বিশেষ করে শিশুসহ রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক নিয়োগের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এবং অপরাধসমূহ তুলে ধরে। রেজ্যুলেশনটিতে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য জবাবদিহিতার সমস্ত প্রক্রিয়াকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। এছাড়াও রেজ্যুলেশনটি একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেয় এবং সংস্থাটির পাঁচ-দফা ঐক্যমত্য সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে গৃহীত উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে।
রাষ্ট্রদূত মুহিত সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি একটি জটিল ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। গত সাত বছরেও সংকটের মূল কারণসমুহ নিরসনে কোনও বাস্তব অগ্রগতি সাধিত হয়নি বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন এবং সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে আজ গৃহীত রেজ্যুলেশনের উল্লেখপূর্বক তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তাদের মানবিক সহযোগিতা চালু রাখার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সর্বসম্মতিক্রমে এই রেজ্যুলেশন গৃহীত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি যা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও সংহতির প্রকাশ। প্রেস রিলিজ (Photo credit : Press Wing, Permanent Mission of Bangladesh to the United Nations)

CATEGORIES
Share This