ভিয়েতনামে বাংলাদেশ দূতাবাসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
নিউজ২৪ইউএসএ.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : ভিয়েতনামের হ্যানয়স্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ২১ ফেব্রুয়ারি যথাসযোগ্য মর্যাদায় মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়।
সকালে দূতাবাসে দিবসটির প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। সবশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দ এবং মহান একুশের ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
সন্ধ্যায় দূতাবাসের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে হ্যানয়স্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকবৃন্দ, ইউনেস্কো অফিস প্রধান এবং ভিয়েতনামে অবস্থিত প্রবাসি বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম সংগীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় এবং পরে এ দিবস উপলক্ষ্যে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ লুৎফর রহমান এবং হ্যানয়স্থ ইউনেস্কো অফিস প্রধান জনাথন ডব্লিউ বেকার । রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ লুৎফর রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদগণ এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত রহমান বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য একদিকে কষ্টের, অন্যদিকে সম্মান ও গৌরবের। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে আমাদের এক ঝাঁক তরুন রাজপথে তাদের জীবন উৎসর্গ করে। আমরা রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষার অধিকার ফিরে পেয়েছি যা বিশ্বে বিরল। অন্যদিকে দিবসটি গৌরবের। আমাদের রক্তে অর্জিত ভাষার অধিকারের সম্মানে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০০০ সাল থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রকর্তৃক একযোগে পালিত হয়ে আসছে। আমাদের এই বিরল অর্জনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রাষ্ট্রদূত রহমান।
হ্যানয়স্থ ইউনেস্কো প্রতিনিধি জনাথন বেকার দিবসটির প্রতিপাদ্য “বহুভাষার মাধ্যমে শিক্ষাঃ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান চর্চার স্তম্ভ” উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বে অনেক শিশু মাতৃভাষায় শিক্ষার গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ মাতৃভাষা ভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষাব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাক্ষেত্রে পরিপূর্ণ বিকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ। এটি নিজ ভাষায় দক্ষতার সাথে পড়াশুনা করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাষায় দক্ষতা লাভের দ্বার উন্মোচন করে। জাতিসংঘ উন্নয়ন অভিষ্ট লক্ষ্য-৪ (অন্তর্ভূক্তিমূলক, গুনগত এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ) বাস্তবায়নের পথ সুপ্রসারিত হয়।
আলোচনা পর্ব শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্যান্যদের মধ্যে, উক্ত অনুষ্ঠানে হ্যানয়স্থ ভারতের দূতাবাসের উপস্থায়ী প্রতিনিধি সুভাষ গুপ্ত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মানে তার স্বরচিত কবিতা তার মাতৃভাষায় আবৃত্তি করে শোনান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মিশনের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান নাসির উদদীন।